এম.আর মাহমুদ :
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী চকরিয়া পৌর সদর। শত শত যুবক কিশোর-কিশোরী প্রতিদিন বেঁচা-কেনা করছে অঢেল ইয়াবা। সকাল থেকে সন্ধ্যাবধি চকরিয়া সদর যেন ইয়াবার হাট। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জনপ্রতিনিধি, গোয়েন্দা সংস্থা কারো কোন মাথা ব্যথা নাই। মাদক রাহুগ্রাসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উঠতি বয়সের যুবকরা। মাদকের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অঘটন ও অপরাধ। চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুলের কান্না দেখে মনে হয়েছে ইয়াবা সিন্ডিকেটের কোমরের শক্তি অনেক বেশি অপ্রতিরুদ্ধ। লাগাম টানার সাহস কারো নেই। একজন পৌর কাউন্সিলরের মর্যাদা কোন অংশেই কম নয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সমমর্যাদা। ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে গিয়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারই এলাকার জিয়া উদ্দিন বাবলু নামক একজন ইয়াবা সিন্ডিকেট প্রধানের রোসানলে পড়ে অপহৃত হয়েছিল ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টায়। তার ভাষায় অপহরণকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই অপহরণ করে রীতি মত আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ভাগ্য চক্রে পুলিশ, পৌর মেয়র, কাউন্সিলরসহ এলাকার জনগণের সার্বিক সহায়তায় প্রাণে রক্ষা পেলেও তুলা-ধুনা থেকে নিস্তার পায়নি। জিয়া উদ্দিন বাবলুসহ ১০ জনকে আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করলেও প্রধান আসামী নিরুদ্দেশ। অপরদিকে অপহরণকারী দলের সদস্য রাসেলকে আটক করায় রাসেলের ভাই সালাহউদ্দিন ও শাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী একত্রিত হয়ে কাউন্সিলরের বোন হুমাইরার বসত ঘরে ঢুকে লুটপাট চালিয়ে হুমাইরার হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছে। আহত হুমাইরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ০২ অক্টোবর চকরিয়া পৌরসভার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পৌর পরিষদের সকলের সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে গিয়ে পৌর কাউন্সিলর নজরুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে বার বার বলতে শোনা গেছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তান্ডবে সে সহ তার পরিবার বড়ই অসহায়। তার বক্তব্য শোনে অনেকেই হতভাগ হয়েছে। হওয়ারও কথা, ‘কিন্তু সর্বাঙ্গে ব্যথা মলম লাগাবে কোথায়?’ প্রসঙ্গক্রমে একটি গল্পের অবতারণা না করলে যথার্থ হয় না। এক সময় পুলিশ ও প্রশাসনিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঢাকা সিটি এলাকায় বেশক’টি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েক জোড়া নগরবালাসহ খদ্দর আটক করে। পরদিন পুলিশ তাদেরকে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করলে তাদের কাজ থেকে জানতে চায় কি অপরাধে পুলিশ তাদেরকে আটক করেছে। এ সময় এক খদ্দর জবাব দিয়ে বসল, হোটেলে আমোদ-প্রমোদ করার সময় বেরসিক পুলিশ হানা দিয়ে আমাদেরকে গ্রেফতার করেছে। আমাদের কপাল মন্দ কি আর বলব যারা পুলিশী অভিযানের সময় পালিয়ে গেছে তারা ভাগ্যবান। অনেককেই এখানে উপস্থিত দেখছি। তাই কোন মন্তব্যই করছি না। হুজুর যা করার করেন। ইয়াবার আগ্রাসন দেখে মনে হচ্ছে দেশের চিত্র এমনই। কবিতার ভাষায় বলতে হয়, শিব: ঠাকুরের আপন দেশে আইন কানুন সর্বনাশে, বলার কিছু নাই, করার কিছু নাই, বলাও যাবে না, সহ্য করাও যাবে না। নিরবে হজম করতে হবে। অন্যথায় কাউন্সিলর নজরুলের ভাগ্যেই বরণ করতে হবে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ বিজিবি কোস্ট গার্ড ও র্যাব গোয়েন্দা বিভাগ ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ইয়াবা আটক করছে। কিন্তু ইয়াবার চালান বন্ধ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ যেন ধ্র“পদী শাড়ি। যতই টানে, ততই লম্বা হয়। ইয়াবা পাঁচার ও ব্যবসায় কারা জড়িত? কাদের ইন্ধনে এ ব্যবসা বিস্তার হচ্ছে? সকলেই জানে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাদের তালিকাও আছে। কিন্তু ইয়াবা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ইয়াবা পাঁচারে প্রভাবশালীরায় জড়িত। কালে ভাদ্রে কিছু চুনু পুঁটি ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালরা বীরদর্পে বিচরণ করে যাচ্ছে। সভা সমাবেশে ইয়াবার কুফল ও ইয়াবা বন্ধের বয়ান দিয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা পাঁচারে মূল জায়গায় আঘাত না করলে কাউন্সিলর নজরুলের কান্না বৃথাই যাবে। দেশের আমজনতা মাদক মুক্ত সমাজ চায়। মাদকের কুফলের শিকার সমাজের রন্দরে রন্দরে দেখা যাচ্ছে। মাদকাসক্ত ছেলে মেয়ের হাতে মা-বাবা খুন হচ্ছে। আবার যেসব আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন প্রতিদিন অপরাধ দমনে ব্যস্ত, তারাও ইয়াবাসহ গ্রেফতার হচ্ছে। ইহা কিসের আলামত? এক সময় গ্রামে প্রবীণ লোকজন বলত, চোরের ভিটায় দালান উঠে না। তবে চোরা চালানির ভিটায় দালান উঠত। ইদানিং সহজে আলিশান বাড়ি ও গাড়ির মালিক হতে হলে ইয়াবা ছাড়া কোন বিকল্প নাই। সীমান্তবর্তী এলাকায় যাদের জীর্ণ-কুঠির ছিল, তাদের বাড়ির অবস্থা না দেখলে কোন মন্তব্য করা যাবে না। অতএব, জরুরী ভিত্তিতে আইন প্রয়েঅগকারী সংস্থার সাথে সর্বস্তরের মানুষ ইয়াবা প্রতিরোধে সোচ্চার না হলে কারো শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হয় না।
পাঠকের মতামত: